প্রতিষ্ঠাতা ও দাতার জীবনী

কমলগঞ্জের একাধিক প্রতিষ্ঠানের দিকপাল, আলোকিত ব্যক্তিত্ব, সাবেক ছাত্র নেতা,লেখক,শিক্ষাবিদ ফখর উদ্দিন চৌধুরী ও তার সহধর্মিনী ফারহানা চৌধুরীর অর্থায়নে ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে প্রতিষ্ঠা করা হয়  হুরুন্নেছা  খাতুন চৌধুরী কলেজ। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই  জনাব ফখর উদ্দিন চৌধুরী একই সাথে  অধ্যক্ষের দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করে আসছেন।নিম্নে তাদের জীবন  বৃত্তান্ত সংক্ষিপ্ত আকারে আলোকপাত করা হলো।

 জনাব ফখর উদ্দিন চৌধুরী ১৯৬২সালের ১০ই ফেব্রুয়ারী সিলেট নগরীর লামাবাজার পুলেরপাড়স্থ পিত্রালয়ে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানাধীন বৈরাগীর চক গ্রামে। পিতা মরহুম হাজী মোহাম্মদ আবুল ফজল চৌধুরী ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অধীনস্থ উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা। ফখর উদ্দিন চৌধুরীর মাতা হুরুন্নেছা চৌধুরী প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাঁর বাল্যজীবন কেটেছে সিলেট শহরে। তিনি সিলেট সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে ১৯৭৮ সালে এস এস সি ১৯৮১সালে মদনমোহন কলেজ থেকে এইস এসসি এবং ১৯৮৭সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাশ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯০সালে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া তিনি লন্ডনের ব্রিট কলেজ ও সান্ডারল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতেও লেখা পড়া করেন।

জনাব ফখর উদ্দিন চৌধুরী ১৯৮৫ সালে কমলগঞ্জের বৃন্দাবনপুরে তাঁর মাতা ও ভাই বোনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়। 

১৯৮৬সালে আহমদ নগর সুন্নীয়া আলীয়া মাদ্রাসা (বর্তমানে দাখিল মাদ্রাসা )প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নগদ দশ হাজার টাকা দান করে দাতা সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৮৮সালে স্থানীয় যুব সমাজের খেলাধুলার সুবিধার্থে জনাব ফখর চৌধুরী প্রভাতী স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে ক্লাবের স্থায়ী অবকাঠামোর জন্য এক খন্ড ভূমি প্রদান করেন। 

জনাব চৌধুরী ১৯৮৮সালে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজদিঘীরপার বাজার পুনর্নির্মাণে সহযোগিতা করেন। ১৯৯২সালে উক্ত বাজারে ফখর চৌধুরী চেম্বার হল স্থাপন করে এলাকাবাসীদের বিনা ভাড়ায় সভা,সমিতি ,সেমিনার ,সাহিত্য সভা ও গ্রাম্য সালিশ বিচার কার্য সম্পাদন করার সুযোগ করে দেন। এছাড়া তিনি রাজদিঘীর পার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা নিজস্ব ভূমিতে নিজ খরচে সম্পন্ন করেন। ২০০২ সালে ফখর চৌধুরী কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠিত হয়। এই ট্রাষ্টের মাধ্যমে ফখর চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায়  বর্তমানে নিয়মিত গরিব ও অসহায়দের ত্রাণ বিতরণ ,শীত বস্ত্র প্রদান এমনকি গুণীজনদের সংবর্ধনাও প্রদান করা হচ্ছে। ১৯৮৬সালে প্রতিষ্ঠিত আবুল ফজল চৌধুরী হাফিজিয়া মাদ্রাসার তিনি একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া তিনি হুরুন্নেছা খাতুন চৌধুরী গনপাঠাগার,রসুলপুরের হাজেরা ভানু চৌধুরী কে.জি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এবং মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসারও একজন দাতা সদস্য। 

ফখর উদ্দিন চৌধুরীর অর্থায়নেই রাজদিঘীর পার পোষ্ট অফিসের স্থায়ী ভবন নির্মিত হয়।

 এছাড়া তিনি মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত হুরুন্নেছা চৌধুরী স্মৃতি সংসদ গঠন করে বিভিন্ন আর্থ সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ইংল্যান্ডের লন্ডনে বসবাসরত ফখর উদ্দিন চৌধুরীর চেষ্ঠায় ও তত্ত্বাবধানে ১৯৯৯সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয় কমলগঞ্জ সমিতি। বর্তমানে তিনি এই সমিতির যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। 

ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।ছাত্র রাজনীতির বর্ণাঢ্যময় জীবনে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ,সহ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব বিভিন্ন মেয়াদে পালন করেছেন। মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও ১৯৮৬সাল থেকে ১৯৮৮সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। 

লেখালেখির সাথে সিদ্ধহস্ত এই মানুষটির লেখা দুটি বই ‘মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর সিলেট ’এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্যে কমলগঞ্জ ‘ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। ২০০৮সালে রাজদিঘীরপাড়ে প্রাপ্ত ৭০০বছরের পুরাতন একটি বিষ্ণু মূর্তি অকস্মাত চুরি হয়ে যায়। ৭০কোঠি টাকা মূল্যমানের এই পুরাতন মূর্তিটি উদ্ধারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে এই মূর্তিটি ঢাকার জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। কমলগঞ্জ থেকে প্রকাশিত কমলকুঁড়ি পত্রিকার তিনি সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি। কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের স্থায়ী ভবন নির্মাণেও তিনি ইতিমধ্যে বড় অংকের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে দাতা সদস্যের মর্যাদা লাভ করেছেন। 

২০০২সালে জনাব চৌধুরী কমলগঞ্জের বিখ্যাত জমিদার ফকির ছলিম উল্ল্যা চোধুরীর অধঃস্থন বংশধর মরহুম মবশ্বির আলী চৌধুরীর দ্বিতীয় কন্যা ফারহানা চৌধুরী নাজনীনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক ফখর উদ্দিন চৌধুরী পরিবার পরিজন সহ বর্তমানে লন্ডনেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।